বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস ঘন ঘন হলে উদ্বিগ্নতার কারণে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বা কমে যায়, যা বড় ধরনের স্বাস্থ্য-ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতি যে কারো সঙ্গে যেকোনো বয়সে হতে পারে। স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।
তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা বা এনএইএস-এর তথ্য মতে তরুণ-তরুণী এবং কিশোর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার কিছু কারণ:
১. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব। অসময়ে ঘুমানো। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না হলে, অথবা দূরে কোথাও ভ্রমণে গেলে এমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে। মাদকাসক্ত হলে অথবা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করলে।
২. পরিবারে কারো স্লিপ প্যারালাইসিস হয়ে থাকলে। সোশ্যাল অ্যাঙ্কজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডার বা বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যা থাকলে।
বোবায় ধরার লক্ষণ:
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী স্লিপ পারালাইসিসের সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ হলো :
১. বড় করে নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। মনে হবে যেন বুকের মধ্যে কিছু চাপ দিয়ে আছে। দম বেরোচ্ছে না।
২. অনেকের চোখ খুলতে এমনকি চোখ নাড়াচাড়া করতেও সমস্যা হয়।
৩. অনেকের মনে হয় যেকোনো ব্যক্তি বা বস্তু তাদের আশেপাশে আছে, যারা তার বড় ধরনের ক্ষতি করতে চায়।
৪. ভীষণ ভয় হয়। শরীর ঘেমে যায়।
৫. হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। অনেকের রক্তচাপও বাড়তে পারে।
৬. পুরো বিষয়টা কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্রভাবটি কেটে গেলে আগের মতো কথা বলা বা নড়াচড়া করায় কোন সমস্যা থাকে না। তারপরও অনেকে অস্থির বোধ করেন এবং পুনরায় ঘুমাতে যেতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
রাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়। প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করা। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও। ঘুমের জন্য শোবার ঘরটিতে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। যেন সেই ঘরে কোলাহল না থাকে, ঘরটি অন্ধকার থাকে এবং তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে, খুব বেশি না আবার কমও না।
সম্ভব হলে ঘরে ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার সেইসঙ্গে ধূমপান, মদপান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করার চেষ্টা করা। ঘুমের সময় হাতের কাছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অর্থাৎ ঘুমের বাঁধা হতে পারে এমন কোনো বস্তু রাখা যাবে না। দিনের বেলা দীর্ঘসময় ঘুম থেকে বিরত থাকতে হবে।