মাত্র ১০ টাকায় অনেক দুস্থ মানুষের পেট ভরাচ্ছেন নাগপুরের আজ্জী। এ এক খালি পেটের গল্প। খিদের সঙ্গে লড়াই করার গল্প।
যে গল্পের পাতায় পাতায় রয়েছে অনেকটা সংগ্রাম এবং মানুষের জন্য ভালো কাজ করার তাগিদ। আর তাই নাগপুরের আজ্জী বলতে পারেন,
তার না খেয়ে থাকা দিনগুলোর কথা। সততা তার চরিত্রের সবথেকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলেই বোধহয় আজ অনেকের ভিড়ে তিনি স্বতন্ত্র।
গরিব মানুষকে তিনি চান স্বাস্থ্যকর অথচ কম খরচে ভালো আহার। আর এইজন্যেই শারীরিক শ্রম মনের যত্ন মিলিয়ে রোজ তিনি বানান অজস্র ধোসা। কিন্তু আজ্জীর বানানো ধোসা একটি বিশেষ কারণে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার বানানো এই ধোসার দাম মাত্র ১০ টাকা। হ্যাঁ, এই নামমাত্র টাকাতেই ধোসা বিক্রি করেন তিনি। তার নাম সারদা। নাগপুরের এই এক জননী ২০০৪ সাল অব্দি সবজি বিক্রি করে এবং বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতেন। এরপরে তিনি শুরু করেন তার ধোসার ঠেলা গাড়ি। গোড়ার থেকেই অন্যান্য ধোসা বিক্রেতাদের চেয়ে অনেক কম টাকায় ধোসা বিক্রি করতেন তিনি। কারণ একটাই জনকল্যাণ। সকলে ৬২ বছরের সারদাকে ধোসা আজ্জী বলেই ডাকেন। সমস্যা বা প্রতিকূলতা যতই বড় হোক সারদা আজ্জীর মুখে একটাই কথা সব ঠিক হয়ে যাবে। বৈবাহিক জীবনে গার্হস্থ হিংসার সম্মুখীন হতে হয়েছিল আজ্জীকে।
তাই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন তিনি। এমন বহুদিনের অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে সঞ্চিত যখন এক দানা অন্ন জোটেনি খুদা নিবারণের জন্য। নাগপুরের শ্রীদেবী নগর স্কুলের সামনেই সারদার ধোসার স্টল। দাম কম বলেই মনে হয় এত মানুষের ভিড় সেখানে। দুটো ধোসা এবং চারটে এগিয়েই সারদা আজ্জী বিক্রি করেন ১০ টাকায়। তিনি জানিয়েছেন দিনে ৪০ জন খদ্দের আসেন মাসে ১০ হাজার টাকা তার আয় হয়। এর বেশি টাই চলে যায় স্টলের সরঞ্জাম কিনতে। আর বাড়ির সবজি কিনতে। হ্যাঁ হয়তো খুব বেশি লাভ হয় না তার, কিন্তু যখন ক্ষুধার্তদের পরিতৃপ্তি সহকারে খেতে দেখেন তার মনে হয় তিনি তার শ্রমের মূল্য পেয়ে গেছেন। তিনি যখন প্রথম ধোসার ঠেলা শুরু করেন তখন একটি ধোসার জন্য মাত্র দু টাকা দাম নিতেন। এর কারণ কি! আসলে এমনও দিন গিয়েছে তখন তিনি আর তার ছেলে একবেলাও খেতে পাননি আর এটা যে কতটা কষ্টের যন্ত্রণার এবং কতটা মারাত্মক সেটা তার খুব ভালোভাবে জানা।
বহুদিন অবধি তিনি এক অত্যন্ত অসহায় জীবন কাটিয়েছেন। কিন্তু যখন সুযোগ পেয়েছেন তখন ঠিক করেছিলেন দুস্থদের সাহায্য করবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর এই ভাবনা থেকেই স্কুল পড়ুয়া এবং দিনমজুরির জন্যে গরম সুস্বাদু ধোসার স্টল শুরু করেন। আর সেই ধোসা যেন তারা কিনে খেতে পারেন সেই দিকে লক্ষ্য রেখেছেন সারদা আজ্জী। তার কাছে দাম নয় বরং মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসিটাই তার কাছে ভীষণ রকম ভাবে দামি। আজকালকার দিনে এমন নিঃস্বার্থ মানুষ ঠিক কজন হয় বলুন তো! সারদা আজ্জীর এমন কাজকে সম্মান জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার অসংখ্য মানুষ। সম্প্রতি ফেসবুকের The Bong Untold নামের ফেসবুক একাউন্ট থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে মাত্র একদিন আগে আর তার মধ্যেই বর্তমানে ভিডিওটিকে দেখেছেন ৮৩ হাজার মানুষ আর লাইক করেছেন হাজার হাজার মানুষে। ভিডিওটিতে অসংখ্য কমেন্ট এসেছে এবং শত শত মানুষ ভিডিওটিকে চারিদিকে শেয়ার করেছেন।